বইয়ের নাম -“মুহম্মদ ইবনে কাসিম”
লেখক - নসীম হিজাযী
রিভিউ লিখেছেন - Hasibul Hassan
তখন ছিল এমন এক সময় যখন তারা ছিল নৈতিক দিক দিয়ে পৃথিবীর দরিদ্রতম জাতি। কিন্তু এক আদর্শিক বিপ্লব সেই জাতিকে ফিল্টার করে সম্পূর্ণ নতুন এক আদর্শে উজ্জীবিত করল। তারা এতটাই উঁচুতে উঠে গেল যে,পুরো পৃথিবী তাদের জয়যাত্রার খবর শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেল এবং তাদেরকেই সভ্যতা,মানবতা ও সাম্যের রক্ষক হিসেবে মন থেকে স্বীকার করে নিল। হ্যাঁ, আমি আরবদের কথাই বলছি।
উপমহাদেশের মানুষ তখনো অধিকাংশ রাজ্যের অত্যাচারী রাজাদের দ্বারা উৎপীড়িত হচ্ছে। তবে তাদের নিপীড়ন ততক্ষণ পর্যন্ত আরবদের কানে পৌঁছায় নি, যতক্ষণ না দেবলের শাসনকর্তা আরব বিধবা নারী ও এতীম শিশু বহনকারী এক আরব জাহাজ এবং বসরার শাসনকর্তার উদ্দেশ্যে প্রেরিত সিন্ধুর এক প্রদেশের বন্ধুত্বকামী সরলপ্রাণ রাজার পুরষ্কার সমৃদ্ধ জাহাজকে দেবল বন্দরে না আটকায়। অনেক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে কিছু বন্দী আরব মুক্ত হয়ে এক বন্দী আরব বালিকার চিঠি দামেস্কে খলীফার নিকট পেশ করে। আর বাকীটা মুহাম্মদ ইবনে কাসিম নামক এক সতের বছর বয়স্ক বালকের ইতিহাস এবং সম্ভবত মুসলিম জাতির এক আক্ষেপের ইতিহাসও বটে।
একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে শেষ করলাম উপমহাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক নসীম হিজাযীর এক অনবদ্য রচনা “মুহম্মদ ইবনে কাসিম”। লেখকের সাহিত্যকর্মগুলোকে মূল্যায়নের জন্য সবচাইতে ভাল বাক্য হল, “তিনি ইতিহাসের প্রয়োজনে উপন্যাস সৃষ্টি করেছেন”। সুতরাং আদর্শগতভাবেই তার উপন্যাসে কোন ঐতিহাসিক সত্যের বিন্দুমাত্র বিকৃতি হয়নি। ইতিহাসের ঘটনা পরম্পরাই উপন্যাসের লক্ষ্যবস্তু। এই শক্তিশালী উপন্যাসিকের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম বলে নিজের উপরই বিরক্ত হচ্ছি। আমি এখন নিশ্চিত যে, আমার পাঠকজীবন পুরোটাই ব্যর্থ হয়নি,আমি এরকম একটা বই ও তার লেখকের সন্ধান পেয়েছি। একটা গ্রুপে আমি বইটার খোঁজ পাই। কিছুদিন আগেই গ্রুপে বইটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সেখানে কমেন্টকারীদের একজন বললেন যে এই বই পড়েই ইসলাম সম্পর্কে তার ভূল ধারণার পরিবর্তন হতে শুরু করে। তাদের পোষ্ট আর মন্তব্যেই মূলত বইটার ব্যাপারে আমার আগ্রহ তৈরি হয়। তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এখন আমি আমার শেকড় চিনি,আমার পূূর্বপুরুষদের কীর্তি সম্পর্কে জানি। আর আমার দায়িত্বের তাড়নাও অনুভব করি।
অশ্লীলতা আর যৌন সুড়সুড়ির মাধ্যমে পাঠককে কু-প্রবৃত্তির চর্চা না শিখিয়েও যে জনপ্রিয় উপন্যাস রচনা করা যায়, তার সহজ উদাহনরণ হলেন নসীম হিজাযী। তিনি সত্যব্রতী লেখক, একইসাথে সু-সাহিত্যিক।
অনুবাদের ক্ষেত্রে এক্কেবারে সরল অনুবাদের চাইতে শৈল্পিক অনুবাদ আমার বেশী ভাল লাগে। এক্ষেত্রে অনুবাদক আমাকে সন্তুষ্ট করেছেন একইসাথে সরলপ্রেমীদেরও নিরাশ করেননি। অনুবাদ যথেষ্ট শৈল্পিক হলেও অনুবাদক এর সরলতা বজায় রেখেছেন। পাঠককে হিজাযীর সুলিখিত ইতিহাসকেন্দ্রিক উপন্যাসের জগতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এরইমধ্যে অনেকেই হয়ত পড়ে ফেলেছেন।
মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের বক্তৃতাগুলো ছিল সোনার অক্ষরে বাঁধিয়ে রাখার মত। তার পরিণতি আর মুসলিম জাতির অধঃপতন একে অপরকে জড়িয়ে আছে। প্রকাশক হিজাযীর উপন্যাস সম্পর্কে লিখেছেন, “তার উপন্যাসগুলো বোনের কাছে মায়ের মৃত্যুর গল্প শোনার মত। চোখ বেয়ে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়ে”। ভাল থাকুক নসীম হিজাযী, আপাতত তার অমর কীর্তিগুলোই আমাদের আনন্দিত ও গর্বিত করার পাশাপাশি পথও দেখাক। আমরা “আঁধার রাতের মুসাফির”।
TAg:
মুহাম্মদ বিন কাসিম pdf , হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাজা দাহির ,হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে ছিলেন মুহম্মদ বিন কাসিম pdf
মুহম্মদ বিন কাসিম
মুহাম্মদ বিন কাসিম কত সালে সিন্ধু বিজয় করেন
মুহাম্মদ বিন কাসিম
মুহম্মদ বিন কাসিম [Muhammod Ibn Kashim]
Written By Bangladeshi on Thursday, 9 March 2017 | 20:31
Bangladeshi
at
20:31
নসীম হিজাযীর সবগুলো উপন্যাস চাই।
ReplyDeleteDhonnobad
ReplyDelete