Blog Archive

Written By Bangladeshi on Tuesday 28 February 2017 | 19:42

তুর্কী দরবেশ সাঈদ নূরসী(রহঃ) [Said Nursi]


১৯৬০ সালে তুরস্কে কট্টর সেক্যুলারিস্ট জাতীয়তাবাদীরা সেনাবাহিণীর সহায়তায় একটি ক্যু ঘটায়। সেনাবাহিণীর একটি অংশ আলপারস্লান তুর্কীসের নেতৃত্বে একটি কবরের সন্ধানে বেরিয়ে পরে। অতঃপর তারা যখন তাদের কাঙ্ক্ষিত কবরের সন্ধান পায়, তখন সেই কবর খুরে সেখান থেকে দেহাবশেষ অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে ফেলে। এটা ছিল সাঈদ নূরসীর কবর, যিনি বদিউজ্জামান নামে সুপরিচিত। এই কট্টর সেক্যুলারিস্ট জাতীয়তাবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কের বুক থেকে সাঈদ নূরসীর আদর্শের মৃত্যু ঘটানো। কি ছিল তার আদর্শ? 

কুর্দী বংশোদ্ভূত নূরসীর জন্ম ১৮৭৬ সালে পশ্চিম তুরস্কে। ওসমানীয় সাম্রাজ্যের (Ottoman Empire) সূর্য তখন ডুবছিল। নিজ শহরেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ধর্মীয় নানা বিষয়ে তিনি তৎকালীন তুরস্কের অন্যান্য পন্ডিতদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তীক্ষ্ম স্মরণশক্তির অধিকারী ও সুবক্তা হওয়ার কারণে তাকে উপাধি দেয়া হয়েছিলো বদিউজ্জামান, যার অর্থ, সময়ের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তিনি তৎকালীন তুরস্কে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্ত্তষ্ট ছিলন না। তিনি চেয়েছিলেন এর সংস্কার। তিনি চেয়েছিলেন বিজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় সাধণ করতে। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং রাশিয়ার কাছে যুদ্ধবন্দী হিসেবে গ্রেফতার হোন। সেখান দুবছরেরও অধিক সময় অতিবাহিত করেন। ১৯১৮ সালের বসন্তে তিনি রাশিয়ান ক্যাম্প থেকে মুক্তি লাভ করে স্বদেশে ফিরে আসেন। তিনি নিজ দেশে সাদরে আমন্ত্রিত হোন এবং "দারুল হিকমাহ আল ইসলামিয়া" নামের একটি ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্য নির্বাচিত হোন। 

পরবর্তীতে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং তুর্কী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মোস্তফা কামাল, সাঈদ নূরসীকে আঙ্কারায় আমন্ত্রণ জানান। তিনি আঙ্কারায় পৌছেই বুঝতে পারেন, কামাল কট্টর সেক্যুলারিজম ও নাস্তিক্যবাদের বীজ বোপন করেছেন। আঙ্কারায় আট মাস অবস্থান করার পর তিনি উপলব্ধি করেন, যেই আদর্শ দ্বারা কামাল তুরস্ককে পরিচালিত করছেন তার সাথে আপোস করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি ঘোষণা করেন, "আমি পৃথিবীকে প্রমাণ করে দেখাবো যে, কুরআন অবিনশ্বর, অফুরন্ত সূর্যের ন্যায়"। তিনি রচনা করেন ছয় হাজার পৃষ্ঠাব্যাপী পবিত্র কুরআনের এক তাফসীর, নাম তার রিসালে নূর। 

নূরসীর মতে এই সময়ের সবচেয়ে বড় শত্রু নাস্তিক্যবাদ, সেক্যুলারিজম, বস্ত্তবাদী দর্শন এবং সমাজতন্ত্র। নূরসীর লেখা, তার চিন্তাধারা তুরস্কে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। এমনকি সমাজের বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও তার দর্শন আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে সরকার তাকে তুরস্কের আদর্শের বিরুদ্ধাচারণের অজুহাত তুলে গ্রেফতার করে। অবশ্য ১৯৫৬ সালে তিনি এইসব অভিযোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬০ সালের ২৩ শে মার্চ, তুরস্কের উরফা (গ্রীক ভাষায় এডেসা) নগরীতে ইসলামের এই মহান মুজাদ্দিদের জীবণাবসান হয়। 

ডাউনলোড


0 comments:

Post a Comment

E Boi Download© 2014. All Rights Reserved. Template By Seocips.com
SEOCIPS Areasatu Adasenze Tempate Published By Kaizen Template