শাহ ওয়ালী উল্লাহ ও তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা
শাহ ওয়ালিউল্লাহ বাল্য বয়স থেকেই অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। তিনি সাত বছর বয়সের সময় কুরআন মজীদ কন্ঠস্থ করেন এবং পনর বছর শেষ হবার আগেই যোগ্য পিতার তত্ত্ববধানে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সকল বিষয়ে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। বস্তুত এ কারণে ১১৩১ হিজরীতে যখন শাহ আবদুর রহীমের ইনেতিকাল হয়, তখন সতর বছর বয়সেই তিনি পিতার শিক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যেমে ইসলামী জ্ঞান বিতরণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ একাদিক্রমে বার বছর পর্যন্ত দিল্লীর রহিমীয়া মাদ্রাসায়া অধ্যাপনার কাজে লিপ্ত ছিলেন। এ সময় ইসলামী জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে তাঁর যথেষ্ট উৎকর্ষতা সাধিত হয়। কিন্তু মুসলিম সমাজের চিন্তাগত, নৈতিক ও রাজনৈতিক অধপতিত সাক্ষাৎ – অসক্ষাৎ অবস্থা তাঁকে এ সময়ে বসে থাকতে দিল না, বিশেষ করে তৎকালীন ভারতের ধর্মীয়, রাজনৈতক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন সমূহের গতিধারা লক্ষ্য করে তিনি গভীর ভাবে চিন্তাযক্ত হয়ে পড়েন। কেননা, সম্রাট আলমগীরের জীবদ্দশাতেই ভারতে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ভায়াবহ দু’টি আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একটি দক্ষিণ ভারত থেকে শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠা আন্দোল, অপরটি শিখ আন্দোল। এছাড়া অন্যান্য বিষয়তো আছেই। ভারতে হিন্দু সভ্যতা ও সং স্কৃতির নিরংকুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠানই ছিল মারাঠা আন্দোলনের লক্ষ্য। শিখদের যাবতীয় ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চলতো পাঞ্জাবকে কেন্দ্র করেই। প্রথম দিক থেকে এটি ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন হলেও পরে গরু গোবিন্দের নেতৃত্বে রাজনৈতিক রূপ লাভ করে। মুসলমানদের সঙ্গে তাদের দুশমনির সং ক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে গিয়ে সিয়ারুল মুতায়াখাখিরীন গ্রন্হের লেখক উল্লেখ করেন। যে, তাঁরা যেখানেই মুসলমানদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করতে সেখানেই তাদের বিষয় সম্পত্তিই কেবল লুটতরাজ করে নিয়ে যেতো না, বরং মুসলমানদের রক্তে হোলি খেলতো। এমনকি তাদের হাত থেকে শিশু- সন্তান পর্যন্ত রক্ষা পেতো না। গর্ভবতী রমণীদের পেট চিরে সন্তান বের করে মা বাপের সামনেই তাদের হত্যা করতো। (সি,মু ৪২ পৃঃ) জনৈক হিন্দু লেখক বলেনঃ মুসলমানদেরকে শিখেরা নিজেদের চরম শক্র মনে করতো। নিজেদের প্রভাবিত এলাকায় মুসলমানদেরকে আযান দিতে দিত না। সমজিদগুলোকে তাদের ধর্মীয় গ্রণ্ঠপীঠ ও উপসনালয়ে পরিনত করতো এবং সমজিদের নাম বদলিয়ে একে ‘মস্তগড়’ বলে অভিহিত করতো। তারা মুসলমানদের ব্যবহৃত পাত্রকে অপবিত্র মনে করতো। প্রয়োজনবোধে তাতে পায়েরে জুতো দিয়ে পাঁচটি আঘাত কারার পর উক্ত পাত্র ব্যবহার করতো।
মারাঠো আন্দোলনের হোতা শিবাজী মারাঠাদেরকে উদয়পুরের রাণাদের বংশোদ্ভুত বলে-পরিচয় দিতে বলে এ আন্দোল সহজেই অভিজাত হিন্দু এবং ব্রাহ্মণদের সহযোগিতা লাভ করে। পরবর্তী পর্যয়ে সারা ভারতে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। মারাঠা দস্যুদের হাতে মুসলমানদের জান-মালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ইতিহাস খ্যাত। ‘খাযানায়ে আমেরা’ ও ‘তাবাতা বায়’ গ্রন্হে বলা হয়েছে, মারাঠা কর্তৃক দিল্লীতে লুটতরাজ এবং মুসলিম সভ্যতা- সংস্কৃতির প্রতি যেরূপ অবমাননাকর আচরণ করা হয়, তা যে কোন মুসলমাদের জন্য বেদনার উদ্রেক করে।
0 comments:
Post a Comment